Md Zarjis Alam

Powered By Blogger

Tuesday, 10 October 2023

ভুটান ভ্রমণ


ভুটান

 বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ। যাকে ভুস্বর্গ বলা হয়।  বাংলাদেশী নাগরিকের জন্য অন এরাইভাল ভিসা সিস্টেম চালু আছে।

 ভুটান ভ্রমণের সবচেয়ে উপযোগী সময় হল সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর। এই সময় আবহাওয়া ভালো থাকে।


ভুটানে যাওয়ার উপায়ঃ ভুটানে যাওয়ার দুইধরনের  ব্যবস্থা রয়েছে


১. বিমানে করে যেতেঃ যেহেতু ভুটান ভ্রমণ  অন এরাইভাল ভিসা সিস্টেম চালু আছে। বিমানে করে যেতে শুধুমাত্র এন্ট্রি পার্মিট লাগে। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ড্রুক এয়ারলাইন্স এর মাধ্যমে সরাসরি ভুটানের রাজধানী থিম্পু তে পৌঁছানো যায়।  

২. বাই রোডে যেতেঃ প্রথমে ভারতের ট্রানজিট ভিসা বা সাধারণ ভ্রমন ভিসা করে নিতে হবে। 

কারণ, বাই রোডে যেতে হলে আপনাকে ভারতের উপর দিয়েই যেতে হবে।


আগের দিনঃ

গাবতলী,  কল্যাণপুর, মহাখালী ইত্যাদি থেকে অনেক বাস বুড়িমারীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।  রাতে টিকিট কেটে ভোরবেলায় যেন বুড়িমারীতে পৌঁছানো যায় এরকম বাসে উঠতে হবে।  



১ম দিন

বর্ডার এর আশেপাশে অনেক হোটেল পাওয়া যায় সেগুলো থেকে সকালের নাস্তা সেরে নিয়ে ইমিগ্রেশনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে।


ইমিগ্রেশন সম্পূর্ণ হয়ে গেলে বাংলাদেশের বর্ডারের ওপাশে চ্যাংড়াবান্ধা বর্ডার আছে।  সেখানে অনেক জিপ ভাড়া পাওয়া যায়।  চ্যাংড়াবান্ধা বর্ডার থেকে ভুটানের জয়গাঁও এর দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। জয়গাঁও পৌঁছাতে বিকাল লাগতে পারে। তারপর সেখানে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে একটা ট্যাক্সি নিয়ে থিম্পুর উদ্দেশ্যে  রওনা করতে হবে। সেখানে অনেক হোটেল আছে থাকার জন্য। থিম্পু পৌঁছাতে রাত্রি হয়ে যাবে তাই রাতের খাবার খেয়ে রাতের শহরের দেখতে বের হতে পারেন। আর ক্লান্ত লাগলে ঐদিন বিশ্রাম করতে পারেন। 

THIMPU


২য় দিনঃ

খুব সকালে উঠে থিম্পু শহর হেটে হেটে ঘুড়িয়ে বেরিয়ে দেখবেন। 

এর মধ্যে রয়েছে  সিটি ভিউ পয়েন্ট, ক্লক টাওয়ার, থিম্পু নদী, থিম জং, পার্লামেন্ট হাউস। 

একটু বেলা হলে সকালের নাশতা সেরে নিয়ে একটা  ট্যাক্সি ভাড়া করে শহরের বাইরে ন্যাশনাল জু, বুদ্ধ স্ট্যাচু, ন্যাশনাল চার্টেন দেখো আসতে পারেন। তারপর পাশেই তাসিং ডিজং এ গিয়ে পুনাখা শহরে প্রবেশের পারমিট নিয়ে  হোটেলে ফিরে আসুন।


৩য় দিনঃ

পুনাখা ভালো করে দেখতে হলে ২ দিন মতো সময় লাগবে তাই আগেরদিন জামা কাপড় সবকিছু গুছিয়ে রাখুন এবং ড্রাইভারকে খুব  সকাল সকাল আসতে বলবেন। প্রথমেই চলে যাবেন দোচালা পাস, তারপর পুনাখা জং, ফোক হেরিটেজ মিউজিয়াম, আর্ট স্কুল, ন্যাশনাল লাইব্রেরি, লাখাং মন্দির এগুলো দেখতে দেখতে সারাদিন কেটে যাবে। তারপর রাতে সেখানে কোনো হোটেলে থাকবেন।


৪র্থ দিন

এরপর ফেরার পালা।

পুনাখাতে অনেক ট্যাক্সি পাওয়া যায়। সেখানে দামদর করে একটা ট্যাক্সি নিয়ে জয়গাঁও এসে বর্ডার ক্রস করে ইন্ডিয়াতে চলে আসবেন।  ইন্ডিয়া থেকে একটা জিপ ভাড়া করে চ্যাংড়াবান্ধা বর্ডারে চলে আসবেন। এখানে আসতে আসতে সন্ধ্যা লেগে যাবে। তারপর সেখানে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে বাংলাবান্ধা আসবেন। বাংলাবান্ধা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে অনেক বাস ছেড়ে যায়। এগুলো মধ্যে যেকোনো একটাতে উঠে ঢাকা চলে আসবেন।। সকালের দিকে ঢাকা পৌছে যাবেন।


এখানে খরচের ব্যাপারটা একেক সময়ে একেক রকম। এবং খরচ নির্ভর করবে আপনারা কতজন একসাথে ভ্রমণ করছেন তার উপর। সাধারণত ৭-৮ জন গেলে ৪ দিন থাকতে খরচ হবে জনপ্রতি ১০-১২ হাজার টাকা।


ZARJIS

10-10-2023


at October 10, 2023 No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

Saturday, 19 June 2021

মহাজীবন


 


সুকান্ত ভট্টাচার্য (1926-1947)

হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়
এবার কঠিন, কঠোর গদ্যে আনো,
পদ-লালিত্য-ঝঙ্কার মুছে যাক,
গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো ।
প্রয়োজন নেই, কবিতার স্নিগ্ধতা,
কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী-গদ্যময়:
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি ।
at June 19, 2021 No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest
Labels: কবিতা

Thursday, 25 February 2021

আলেকজান্ডার বিক্রি করে দাঁতের মাজন




আলেকজান্ডার বিক্রি করে দাঁতের মাজন


কবি: রুদ্রেন্দু সরকার।



থাক সমস্ত আকাশ নীল হয়ে।

রামধনুর বর্ণচ্ছটা তোমাদের জন্য তোলা থাক।

চিন্তায় স্বপ্ন কল্পনায়,

আমার ভাতের হাঁড়ি বিষ হয়ে গেছে।


আর তুমি রঙমশালের আলোয়,  

আমার চোখ ধাধিয়োনা।

কত ঘাস আনন্দের অতিশয্যে নুয়ে পড়ে আছে।

কতদিন হলো বেদুইন, 

তোমার ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনতে পাইনা। 

জানিনা কোথা দাঁড়িয়ে আছে পথের বাঁকে,

নুব্জ্য হয়ে পয়সা চাইছে প্রতি জনে জনে।


হে রাজকন্যা! 

তুমি রাজার মেয়ে, হাই তুলছ কেন ?

ফিরিঙ্গি মেয়ের মতো তোমার নরম বুক উচু হয়ে থাক।

হিঞ্চে শাকের পৃথিবীকে

একবার প্রাণভরে দেখে নাও।

কান পেতে শোনো

এখানে দাঁড়কাক প্রতিদিন ডাকে

মেরিয়া থেরিয়াসা কিংবা ক্যাথরিন 

ওদের কথা তুমি জানো?


তুমি তো জানোনা,

এখানে সূর্য প্রত্যহ ওঠে,

ফ্রেডারিক কোন এক কারখানার কুলি,

নেপোলিয়ন ট্রাক চালায় খুব জোরে,

আর আলেকজান্ডার, 

আলেকজান্ডার বিক্রি করে 

দাঁতের মাজন, ট্রেনের প্রতিটি কামরায়।

at February 25, 2021 2 comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest
Labels: কবিতা

Monday, 27 April 2020

কার্বোহাইড্রেট- এর শ্রেণিবিভাগ | মনোস্যাকারাইড








স্বাদের ওপর ভিত্তি করে কার্বোহাইড্রেট দু’প্রকার, যথা-
(১) শ্যুগার: এরা স্বাদে মিষ্টি, দানাদার এবং পানিতে দ্রবণীয়, যেমন- গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুকরোজ ইত্যাদি;
(২) নন-শ্যুগার: এরা স্বাদে মিষ্ট নয়, অদানাদার এবং পানিতে অদ্রবণীয়, যেমন- স্টার্চ, সেলুলোজ, গ্লাইকোজেন ইত্যাদি।

রাসায়নিক গঠন অণুর ভিত্তিতে কার্বোহাইড্রেটকে প্রধানত চার শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো-
১। মনোস্যাকারাইড;
২। ডাইস্যাকারাইড;
৩। অলিগোস্যাকারাইড এবং
৪। পলিস্যাকারাইড।
নিম্নে রাসায়নিক গঠন অনুযায়ী কার্বোহাইড্রেটের শ্রেণিবিভাগ বর্ণনা করা হলো।

১। মনোস্যাকারাইড:
যে কার্বোহাইড্রেটকে হাইড্রোলাইসিস করলে আর কোনো সরল কার্বোহাইড্রেট একক পাওয়া যায় না সেগুলোই মনোস্যাকারাইড। মনোস্যাকারাইড অন্যান্য জটিল কার্বেহাইড্রেট তৈরির গাঠনিক ইউনিট হিসেবে কাজ করে। এর সাধারণ সংকেত হচ্ছে: CnH2nOn। মনোস্যাকারাইডসমূহে একটি মুক্ত অ্যালডিহাইড গ্রুপ (-CHO) বা কিটোন গ্রুপ (-CO-) এবং একাধিক হাইড্রোক্সিল গ্রুপ (-OH)  থাকে। মনোস্যাকারাইডে কার্বনের সংখ্যা ৩-১০। কার্বনের সংখ্যা অনুযায়ী মনোস্যাকারাইডকে তিন কার্বনবিশিষ্ট ট্রায়োজ, চার কার্বনবিশিষ্ট টেট্রোজ, পাঁচ কার্বনবিশিষ্ট পেন্টোজ, ছয় কার্বনবিশিষ্ট হেক্সোজ, সাত কার্বনবিশিষ্ট হেপ্টোজ ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা হয়। জীবদেহের অধিকাংশ মনোস্যাকারাইড অপ্টিক্যাল আইসোমারের উ সিরিজভুক্ত।

মনোস্যাকারাইডগুলোতে অ্যালডিহাইড গ্রুপ (-CHO) বা কিটো গ্রুপ (>C=O) মুক্তভাবে থাকায় এরা বিজারক পদার্থ হিসেবে কাজ করে। কাজেই অ্যালডিহাইড বা কিটো গ্রুপযুক্ত কার্বোহাইড্রেটকে রিডিউসিং শ্যুগার বলা হয়। বেনেডিক্ট দ্রবণের Cu(OH)2 (কিউপ্রিক হাইড্রোক্সাইড) উক্ত শ্যুগারের -CHO বা >C=O গ্রুপের সাথে বিক্রিয়া করে কিউপ্রাস অক্সাইড (Cu2O)-এ পরিণত হয়, যা লাল বর্ণের অধঃক্ষেপ হিসেবে জমা হয়। রিডিউসিং শ্যুগার পরীক্ষা করতে তাই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। মনোস্যাকারাইডসমূহ সাধারণ মিষ্টি স্বাদবিশিষ্ট।

ট্রায়োজ:
তিন কার্বনবিশিষ্ট মনোস্যাকারাইডকে বলা হয় ট্রায়োজ। গ্লিসার‌্যালডিহাইড এবং ডাইহাইড্রোক্সি অ্যসিটোন হলো দুটি সরল ট্রায়োজ। এরা দ্রবণীয় মনোস্যাকারাইড। উদ্ভিদে এরা ফসফেট এস্টার হিসেবে কাজ করে। গ্লিসার‌্যাল্ডিহাইড-এর ১নং কার্বনে একটি কার্বনাইল অক্সিজেন যুক্ত হয়ে একে অ্যালডিহাইড গ্রুপ নির্দেশ করে এবং ডাইহাইড্রোক্সি অ্যাসিটোনের ২নং কার্বনে কার্বনাইল অক্সিজেন যুক্ত হয়ে একে কিটোন গ্রুপ নির্দেশ করে। কাজেই গ্লিসার‌্যাল্ডিহাইড হলো একটি অ্যালডোজ এবং ডাইহাইড্রোক্সি অ্যসিটোন হলো একটি কিটোজ। অ্যালডিহাইড এবং কিটোন গ্রুপকে বলা হয় রিডিউসিং গ্রুপ কারণ এরা সহজেই কতিপয় যৌগের সাথে জারিত হয়ে যায় এবং ঐ যৌগ বিজারিত হয়। তাই অ্যালডিহাইড ও কিটোন গ্রুপযুক্ত চিনিকে বলা হয় রিডিউসিং শ্যুগার বা বিজারক শর্করা।

টেট্রোজ:
চার কার্বনবিশিষ্ট মনোস্যাকারাইডকে বলা হয় টেট্রোজ। ইরিথ্রোজ হলো একটি টেট্রোজ। উদ্ভিদে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি ইরিথ্রোজ-৪ ফসফেট হিসেবে বিরাজ করে। ক্যালভিন চক্রে এর ভূমিকা আছে।

পেন্টোজ:
পাঁচ কার্বনবিশিষ্ট মনোস্যাকারাইডকে বলা হয় পেন্টোজ। জাইলোজ, রাইবোজ, ডিঅক্সিরাইবোজ, রাইবুলোজ ইত্যাদি হলো পেন্টোজ শ্যুগার-এর উদাহরণ।

রাইবোজ:
এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ কার্বনবিশিষ্ট পেন্টোজ শ্যুগার। ১৮৯১ সালে এমিল ফিসার এটি আবিস্কার করেন। এটি রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিডের (RNA) একটি গঠন একক। এর আণবিক সংকেত: C5H10O5। এতে একটি এলডিহাইড গ্রুপ থাকায় এদের অ্যালডোপেন্টোজ বলা হয়। রাইবোজ শর্করার গলনাঙ্ক ৯৫ ডিগ্রি সে., গাঢ় হাইড্রোক্লোরিক এসিড এর সাথে বিক্রিয়া করে ফারফিউরাল অ্যাসিড উৎপন্ন করে। RNA -তে কেবলমাত্র রাইবোজ শ্যুগারই নিউক্লিয়োটাইড বা নিউক্লিয়োসাইড তৈরিতে অংশগ্রহণ করে। এটি নির্দিষ্ট পিউরিন বা পাইরিমিডিন বেস এর সাথে যুক্ত হয়ে একটি নিউক্লিয়োসাইড উৎপন্ন করে। নিউক্লিয়োসাইডের সাথে একটি অজৈব ফসফেট যুক্ত হয়ে নিউক্লিয়োটাইডে পরিণত হয়। কার্বন বিজারণের মাধ্যমে শর্করা তৈরি প্রক্রিয়াতেও রাইবোজ ভূমিকা পালন করে। ATP, NAD+, NADP+, FAD, Co-A ইত্যাদি জৈব অণুর সাথেও রাইবোজ যুক্ত থাকে।

ডিঅক্সিরাইবোজ:
ডিঅক্সিরাইবোজ আর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পেন্টোজ শ্যুগার। এর আণবিক সংকেত: C5H10O4। এতে একটি অ্যালডিহাইড গ্রুপ থাকায় একে ডিঅক্সিঅ্যালডোপেন্টোজও বলে। এটি রাইবোজ শ্যুগার-এর মতোই, পার্থক্য শুধু এই যে, এর ২নং কার্বনে হাইড্রক্সিল গ্রুপের পরিবর্তে কেবল একটি হাইড্রোজেন পরমাণু আছে। ডিঅক্সি অর্থ হলো অক্সিজেন ছাড়া অর্থাৎ ২নং কার্বনে কোনো অক্সিজেন নেই। এর ১নং কার্বন অবস্থানে যে কোনো একটি পিউরিন বা পাইরিমিডিন বেস (A,T,G,C) যুক্ত হলে একটি ডিঅক্সিনিউক্লিয়োসাইড সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় ৫নং কার্বন অবস্থানে অজৈব ফসফেট যুক্ত হলে একটি ডিঅক্সিনিউক্লিয়োটাইড সৃষ্টি হয়। DNA-নিউক্লিক অ্যাসিডের নিউক্লিয়োটাইড গঠনের অংশ হিসেবে বিরাজ করে ডিঅক্সিরাইবোজ শ্যুগার। এই শ্যুগার ছাড়া DNA গঠন সম্ভব নয়।


হেক্সোজ:
৬ কার্বনবিশিষ্ট মনোস্যাকারাইডকে বলা হয় হেক্সোজ। গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, ম্যানোজ, গ্যালাক্টোজ হলো প্রধান হেক্সোজ। এরা উদ্ভিদ কোষে মুক্ত অবস্থায় অথবা অন্য জটিল কার্বোহাইড্রেট-এর অংশ হিসেবে বিরাজ করে। সাধারণত গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজকে মুক্ত অবস্থায় সামান্য পরিমাণে পাওয়া যায়।

গ্লুকোজ:
গ্লুকোজ বা ডেক্সট্রোজ একটি উল্লেখযোগ্য মনোস্যাকারাইড। উদ্ভিদ কোষে দ্রবণীয় অবস্থায় একে পাওয়া যায়। এর আণবিক সংকেত: C6H12O6। এটি একটি অ্যালডোহেক্সোজ কারণ এতে অ্যালডিহাইড গ্রুপ আছে। এটি একটি রিডিউসিং শ্যুগার।

বিভিন্ন প্রকার পাকা ফল ও মধুতে প্রচুর গ্লুকোজ থাকে। পাকা আঙ্গুরে গ্লুকোজের পরিমাণ শতকরা ১২-৩০ ভাগ। একে অনেক সময় গ্রেইপ শ্যুগার বা আঙ্গুরের শর্করা বলা হয়। উদ্ভিদে গ্লুকোজ কখনো সঞ্চিত পদার্থ হিসেবে বিরাজ করে না। শ্বসনের প্রাথমিক পদার্থ হলো গ্লুকোজ।

উৎপাদন ও প্রস্তুত প্রণালি:
প্রকৃতিতে সবুজ উদ্ভিদ থেকে গ্লুকোজ উৎপাদিত হয়। আবার গবেষণাগারে হাইড্রোলাইসিস করে সুক্রোজ ও স্টার্চ থেকে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ প্রস্তুত করা যায়।

বৈশিষ্ট্য:
গ্লুকোজ সাদা দানাদার পদার্থ। স্বাদে মিষ্টি এবং পানিতে সহজেই দ্রবণীয়। এটি অ্যালকোহলে সামান্য দ্রবণীয় কিন্তু ইথারে অদ্রবণীয়।

গ্লুকোজের ব্যবহার:
রোগীর পথ্য হিসেবে গ্লুকোজ-এর বহুল ব্যবহার প্রচলিত। বিভিন্ন ফল সংরক্ষণে গ্লুকোজ ব্যবহার করা হয়। ক্যালসিয়াম গ্লুকোনেট হিসেবে ওষুধ শিল্পে গ্লুকোজ ব্যবহৃত হয়। ভিটামিন ‘সি’ তৈরি করার জন্য গ্লুকোজ ব্যবহৃত হয়। গ্লুকোজ কার্বোহাইড্রেট বিপাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গ্লুকোজের রিং স্ট্রাকচার এবং α/β-উ গ্লুকোজ:
গ্লুকোজের ১নং এবং ৫নং কার্বন কাছাকাছি এলে (দ্রবণে সাধারণত কাছাকাছি আসে) এদের মধ্যে একটি অক্সিজেন সেতু তৈরি হয়। এর ফলে ১নং কার্বনে একটি -OH গ্রুপ সৃষ্টি হয়। নতুন সৃষ্ট এই -OH গ্রুপ ১নং কার্বনের α (আলফা) বা β (বিটা) অবস্থানে থাকতে পারে। -OH গ্রুপের এই α এবং β অবস্থানের কারণে গ্লুকোজের ভৌত, রাসায়নিক এবং জৈবিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে; যেমন- β-গ্লুকোজ গঠন করে সেলুলোজ, কিন্তু α -গ্লুকোজ গঠন করে স্টার্চ। সেলুলোজ কোষের গাঠনিক বস্তু এবং স্টার্চ কোষের সঞ্চয়ী খাদ্য বস্তু।


D এবং L গ্লুকোজ:
গ্লুকোজের ৫নং কার্বন হলো দূরবর্তী ‘অপ্রতিসম’ কার্বন। এই ৫নং কার্বনে সংযুক্ত -OH মূলক ডান দিকে থাকলে তাকে বলা হয় D-গ্লুকোজ। পাঁচ নং কার্বনে সংযুক্ত -OH মূলক বাম দিকে থাকলে তাকে বলা হয় L গ্লুকোজ। L এবং D শ্রেণির সমাণুগুলো পরস্পর দর্পণ প্রতিবিম্ব হয়। D-গ্লুকোজ দক্ষিণাবর্ত হয় যাকে d বা ‘+’ চিহ্ন দিয়ে বোঝানো হয়। L-গ্লুকোজ বামাবর্ত হয় যাকে l বা ‘-’ চিহ্ন দিয়ে বোঝানো হয়। দক্ষিণাবর্ত অর্থ হলো যৌগটি আলোক সক্রিয় এবং ঘূর্ণনের দিক ‘ডান’; বামাবর্ত অর্থ হলো যৌগটি আলোক সক্রিয় এবং ঘূর্ণনের দিক ‘বাম’। গ্লুকোজের ছোট ফ বা ছোট ষ র্ফম অপটিকাল রোটেশন ছাড়া অন্যান্য সকল ভৌত বৈশিষ্ট্য একই প্রকার। উদ্ভিদে সব সময়ই D-গ্লুকোজ থাকে।

ফ্রুক্টোজ:
গ্লুকোজের ন্যায় ফ্রুক্টোজও ৬ কার্বনবিশিষ্ট মনোস্যাকারাইড। এর আণবিক সংকেত গ্লুকোজের মতোই। এটিও একটি রিডিউসিং শ্যুগার। এর গঠনে রয়েছে একটি কিটো গ্রুপ। একে কিটোহেক্সোজও বলা হয়। অধিকাংশ পাকা মিষ্টি ফল ও মধুতে ফ্রুক্টোজ থাকে। তাই এর আরেক নাম ফলের চিনি বা ফ্রুট শ্যুগার। গ্লুকোজ থেকে সহজেই ফ্রুক্টোজ তৈরি হয় আবার সুক্রোজ হাইড্রোলাইসিস এর ফলেও ফ্রুক্টোজ তৈরি হয়। এটি সুক্রোজ এর একটি গঠন উপাদান। গ্লুকোজের মতো ফ্রুক্টোজও D এবং L দু’প্রকার আছে। প্রথম ফ্রুট তথা ফল থেকে শনাক্ত করা হয়েছিল বলে নাম করা হয় ফ্রুক্টোজ। ফ্রুক্টোজ সমপরিমাণ গ্লুকোজের সাথে যুক্ত হয়ে চিনি গঠন করে। তাই একে বীট ও আখের কান্ড রসে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।

বৈশিষ্ট্য:
এটি একটি সাদা বর্ণের, দানাদার, স্ফটিকাকার ও মিষ্টি জাতীয় পদার্থ। পানিতে সহজেই দ্রবণীয়। গরম অ্যালকোহলেও দ্রবণীয়। গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজের আণবিক সংকেত এক হলেও এদের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। তাই এদেরকে আইসোমার বলে।

ব্যবহার:
কনফেকশনারিতে নানা ধরনের মিষ্টান্ন জাতীয় জিনিস প্রস্তুত করার জন্য ফ্রুক্টোজ ব্যবহার করা হয়। সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় প্রুক্টোজ তৈরি করে। সুক্রোজকে আর্দ্রবিশ্লেষণ করলে সমপরিমাণে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ তৈরি হয়।

ম্যানোজ: ম্যানোজ একটি হেক্সোজ। এর আণবিক সংকেত: C6H12O6। এটি একটি অ্যালডোজ শ্যুগার।

গ্যালাক্টোজ:
গ্যালাক্টোজ আর একটি হেক্সোজ। এর আণবিক সংকেত:C6H12O6। এটিও একটি অ্যালডোজ শ্যুগার।

গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, ম্যানোজ, গ্যালাক্টোজ হলো গাঠনিক আইসোমার। এদের সবার গাঠনিক ফর্মুলা C6H12O6 কিন্তু এদের এটমিক বিন্যাস ভিন্ন।

 হেপ্টোজ: সাত কার্বনবিশিষ্ট মনোস্যাকারাইডকে বলা হকয় হেপ্টোজ। সেডোডেপ্টোলোজ হলো একটি হেপ্টোজ শ্যুগার।
at April 27, 2020 No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

Saturday, 15 December 2018

বিদ্রোহী কবিতা

কাজী নজরুল ইসলাম

বল বীর -
বল উন্নত মম শির
শির নেহারি আমারি নতশির ঐ শিখর হিমাদ্রির !
বল বীর-
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া
খোদার আসন আরশ ছেদিয়া
উঠিয়াছে চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাত্রীর !
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটিকা দীপ্ত
জয়শ্রীর
বল বীর -
আমি চির-উন্নত শির !
আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস
মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি
ধ্বংস ।
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বির
আমি দূর্বার
আমি ভেঙে করি সব চুরমার
আমি অনিয়ম উশৃঙ্খল
আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল
আমি মানি না কো কোন আইন
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি
ভীম, ভাসমান মাইন
আমি ধুর্জ্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর!
আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সূত বিশ্ব-বিধাত্রীর!
বল বীর -
চির-উন্নত মম শির !
আমি ঝণ্ঝা, আমি ঘূর্নি
আমি পথ-সমুখে যাহা পাই যাই চুর্নি
আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ
আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ
আমি হাম্বীর, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল
আমি চল-চঞ্চল, ঠ'মকি ছ'মকি
পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি
ফিং দিয়া দিই তিন দোল
আমি চপলা চপল হিন্দোল
আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা
আমি উন্মাদ আমি ঝঞ্ঝা
আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর
আমি শাসন-ত্রাসন সংহার আমি উষ্ণ চির-অধীর
বল বীর-
আমি চির-উন্নত শির !
আমি চির-দুরন্ত দূর্মদ
আমি দূর্দম, মম প্রানের পেয়ালা হর্দম হ্যায় হর্দম ভরপুর
মদ
আমি হোম-শিখা, আমি সাগ্নিক জমদগ্নি
আমি যজ্ঞ, আমি পুরোহিত, আমি অগ্নি
আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয় আমি শ্মশান
আমি অবসান, নিশাবসান
আমি ইন্দ্রানী-সূত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য
মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি আর হাতে রণ তুর্য
আমি কৃষ্ণ-কণ্ঠ, মন্থন-বিষ পিয়া ব্যথা-বারিধির
আমি ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর
বল বীর-
চির-উন্নত মম শির !
আমি সন্ন্যাসী, সুর সৈনিক
আমি যুবরাজ, মম রাজবেশ ম্লান গৈরিক
আমি বেদুইন, আমি চেঙ্গিস
আমি আপনারে ছাড়া করিনা কাহারে কুর্ণিশ
আমি বজ্র, আমি ঈশান-বিষানে ওঙ্কার
আমি ইস্রাফিলের শিঙ্গার মহা হুঙ্কার
আমি পিনাক-পাণির ডমুর শিত্রুল, যমরাজের দন্ড
আমি চক্র ও মহা শঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ প্রচন্ড
আমি ক্ষ্যাপা দূর্বাসা, বিশ্বামিত্র-শিষ্য
আমি দাবানল-দাহ, দাহন করিব বিশ্ব
আমি প্রান খোলা হাসি উল্লাস, আমি সৃষ্টি-বৈরী
মহাত্রাস
আমি মহাপ্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহুগ্রাস
আমি কভূ প্রশান্ত, কভূ অশান্ত দারুন স্বেচ্ছাচারী
আমি অরুন খুনের তরুন, আমি বিধির দর্পহারী
আমি প্রভঞ্জনের উচ্ছাস, আমি বারিধির মহাকল্লোল
আমি উজ্জ্বল, আমি প্রজ্জ্বল
আমি উচ্ছল জল-ছল-ছল, চল উর্মির হিন্দোল-দোল
আমি বন্ধনহারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্নি
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি
আমি উন্মন মন উদাসীর
আমি বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা-হুতাস আমি হুতাসীর
আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চিরগৃহহারা যত পথিকের
আমি অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয়
লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের
আমি অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা
সুনিবিড়
চিত চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর
আমি গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল করে দেখা অনুক্ষন
আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তার কাঁকন চুড়ির কন কন
আমি চির-শিশু, চির-কিশোর
আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচর কাঁচলি নিচোর
আমি উত্তর-বায়ু মলয়-অনিল উদাস পূরবী হাওয়া
আমি পথিক কবির গভীর রাগিনী, বেণু বিনে গান গাওয়া
আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি
আমি মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি
আমি তুরিয়ানন্দে ছুটে চলি, একি উন্মাদ আমি উন্মাদ
আমি সাহসা আমারে চিনেছি আমার খুলিয়া গিয়াছে
সব বাঁধ
আমি উত্থান, আমি পতন, আমি অচেতন-চিতে চেতন
আমি বিশ্বতোরণে বৈজয়ন্তী, মানব-বিজয়-কেতন
ছুটি ঝড়ের মতন করতালি দিয়া
স্বর্গ মর্ত্য-করতলে
তাজী বোর্রাক আর উচ্চৈঃশ্রবা বাহন আমার
হিম্মত-হ্রেষা হেঁকে চলে
আমি বসুধা-বক্ষে আগ্নিয়াদ্রি, বাড়ব-বহ্নি, কালানল
আমি পাতালে মাতাল অগ্নি-পাথার-কলরোল-কল-
কোলাহল
আমি তড়িতে চড়িয়া উড়ে চলি জোর তুড়ি দিয়া দিয়া
লম্ফ
আমি ত্রাস সঞ্চারি ভূবনে সহসা সঞ্চারি ভুমকিম্প
ধরি বাসুকির ফণা জাপটি
ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি
আমি দেব-শিশু, আমি চঞ্চল
আমি ধৃষ্ঠ, আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্বমায়ের অঞ্চল
আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী
মহা-সিন্ধু উতলা ঘুমঘুম
ঘুম চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্ব নিঝ্ঝুম
মম বাঁশরীর তানে পাশরি
আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী
আমি রুষে উঠি যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া
ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া
আমি বিদ্রোহ-বাহী নিখিল আখিল ব্যাপিয়া
আমি শ্রাবন-প্লাবন-বন্যা
কভূ ধরনীরে করি বরনীয়া, কভূ বিপুল ধ্বংস ধন্যা
আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ণু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা
আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি
আমি ধূমকেতু-জ্বালা, বিষধর কাল-ফণী
আমি ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি
আমি মৃন্ময়, আমি চিন্ময়
আমি অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়
আমি মানব দানব দেবতার ভয়
বিশ্বের আমি চির দূর্জয়
জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য
আমি তাথিয়া তাথিয়া মথিয়া ফিরি এ স্বর্গ-পাতাল
মর্ত্য
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ
আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে
সব বাঁধ
আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার
আমি হল বলরাম স্কন্ধে
আমি উপড়ি ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির
মহানন্দে
মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেইদিন হব শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে
না
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান-বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন
আমি স্রষ্টা-সুদন, শোক-তাপ-হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ
করিব ভিন্ন
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান-বুকে এঁকে দিব পদ-চিহ্ন
আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন আমি চির-
বিদ্রোহী বীর--
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির !
at December 15, 2018 No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

Friday, 14 December 2018

টেরিডোফাইটা বা ফার্নবর্গীয় উদ্ভিদ | টেরিস এর যৌন জনন




প্রোথ্যালাসে যৌন জনন সম্পন্ন হয়। এর নিম্নতলে খাঁজের কাছাকাছি স্থানে আর্কিগোনিয়াম (স্ত্রীজননাঙ্গ) উৎপন্ন হয়। যে অংশ হতে রাইজয়েড উৎপন্ন হয় সে অংশে অ্যান্থেরিডিয়াম (পুংজননাঙ্গ) উৎপন্ন হয়, কাজেই প্রোথ্যালাস সহবাসী।
আর্কিগোনিয়াম:
স্ত্রীজননাঙ্গকে আর্কিগোনিয়াম বলে। আর্কিগোনিয়াম ফ্লাক্স আকৃতির। এটি একটি গ্রীবা এবং একটি উদর সহযোগে গঠিত। উদরের নিম্নাংশে একটি ডিম্বাণু আছে এবং ডিম্বাণুর উপর একটি উদরীয় নালিকা কোষ আছে। গ্রীবায় একাধিক গ্রীবা নালিকা কোষ আছে। আর্কিগোনিয়াম পরিণত হলে গ্রীবা নালিকা কোষ এবং উদরীয় নালিকা কোষ বিগলিত হয়ে যায় এবং উদরে শুধু ডিম্বাণু থাকে।
অ্যান্থেরিডিয়াম:
পুংজননাঙ্গকে অ্যান্থেরিডিয়াম বলে। অ্যান্থেরিডিয়াম গোলাকৃতির। এর ভিতরে ৩২ টি শুক্রাণু মাতৃকোষ থাকে। মাতৃকোষগুলো একটি বন্ধ্যা প্রাচীর দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে। প্রতিটি শুক্রাণু মাতৃকোষ রূপান্তরিত হয়ে একটি বহু ফ্ল্যাজেলাযুক্ত শুক্রাণুতে পরিণত হয়। অ্যান্থেরিডিয়ামের শীর্ষের আচ্ছাদনকারী কোষ বিদীর্ণ হয় এবং শুক্রাণুগুলো বের হয়ে ফ্ল্যাজেলার সাহায্যে পানিতে সাঁতার কেটে স্থানান্তরিত হতে পারে।
নিষেক:
শিশির বিন্দু বা বৃষ্টির পানির সাহায্যে শুক্রাণুসমূহ আর্কিগোনিয়ামে পরিবাহিত হয়। আর্কিগোনিয়াম কর্তৃক ম্যালিক অ্যাসিড নিঃসৃত হয়। ফলে শুক্রাণু ডিম্বাণুর প্রতি আকৃষ্ট হয়। শুক্রাণু আর্কিগোনিয়ামের গ্রীবা নালী দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে এবং একটি ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে নিষেকক্রিয়া সম্পন্ন করে। নিষেকক্রিয়ার ফলে ডিপ্লয়েড ঊস্পোর উৎপন্ন হয়। এভাবে নিষেকের ফলে ঊস্পোরে পূর্ণ ক্রোমোজোম সংখ্যা ফিরে আসে এবং সাথে সাথে ডিপ্লয়েড এবং স্পোরোফাইটিক জনু শুরু হয়।

নতুন স্পোরোফাইটিক উদ্ভিদ:
জাইগোট বা ঊস্পোর স্পোরোফাইটের প্রথম কোষ। ঊস্পোর পুনঃ পুনঃ মাইটোটিক কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ভ্রূণ সৃষ্টি করে। ভ্রূণ ক্রমশ বিকশিত হয়ে মূল, কান্ড ও পাতাবিশিষ্ট নতুন স্পোরোফাইট গঠন করে। মূল মাটিতে প্রবেশের পর প্রোথ্যালাস শুকিয়ে যায় এবং স্পোরোফাইটিক উদ্ভিদটি পূর্ণ টেরিস উদ্ভিদে পরিণত হয়।
at December 14, 2018 No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

Friday, 6 April 2018

বাংলা নববর্ষ নিয়ে কিছু কথা:

বঙ্গাব্দের সূচনা সম্পর্কে ২টি মত চালু আছে। প্রথম মত অনুযায়ী - প্রাচীন বঙ্গদেশের (গৌড়) রাজা শশাঙ্ক (রাজত্বকাল আনুমানিক ৫৯০-৬২৫ খ্রিস্টাব্দ) বঙ্গাব্দ চালু করেছিলেন। সপ্তম শতাব্দীর প্রারম্ভে শশাঙ্ক বঙ্গদেশের রাজচক্রবর্তী রাজা ছিলেন। আধুনিক বঙ্গ, বিহার এলাকা তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল৷ অনুমান করা হয় যে, জুলীয় বর্ষপঞ্জীর বৃহস্পতিবার ১৮ মার্চ ৫৯৪ এবং গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জীর শনিবার ২০ মার্চ ৫৯৪ বঙ্গাব্দের সূচনা হয়েছিল।

দ্বিতীয় মত অনুসারে, ইসলামী শাসনামলে হিজরী পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজকর্ম পরিচালিত হত। মূল হিজরী পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বৎসর সৌর বৎসরের চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ সৌর বৎসর ৩৬৫ দিন, আর চান্দ্র বৎসর ৩৫৪ দিন। একারণে চান্দ্র বৎসরে ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। আর বঙ্গদেশে চাষাবাদ ও এজাতীয় অনেক কাজ ঋতুনির্ভর। এজন্য মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে প্রচলিত হিজরী চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্রাট আকবর ইরান থেকে আগত বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতুল্লাহ সিরাজীকে হিজরী চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ফতুল্লাহ শিরাজীর সুপারিশে পারস্যে প্রচলিত ফার্সি বর্ষপঞ্জীর অনুকরণে ৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর হিজরী সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে তিনি ঊনত্রিশ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহনের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ৯৬৩ হিজরী সালের মুহররম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়।

শামসুজ্জামান খান এবং নিতীশ সেনগুপ্তের মতে বাংলা বর্ষপঞ্জির উৎপত্তি পরিষ্কার নয়। এই উৎপত্তিতে ইসলামী প্রভাব ও বৌদ্ধ বা হিন্দু প্রভাব দুইই থাকতে পারে।


ইসলামী প্রভাব সম্পাদনা:
--------------------
শামসুজ্জামান খান বলেন, “একে বাংলা সন বা সাল বলা হয়। এই সন ও সাল হল যথাক্রমে আরবী ও ফারসী শব্দ। এটা নির্দেশ করছে এগুলো মুসলিম রাজা বা সুলতান কর্তৃক বাংলায় পরিচিত করানো হয়”। অন্যদিকে নিতীশ সেনগুপ্ত বলেন, এর ঐতিহ্যগত নামটি হল বঙ্গাব্দ। আকবরের সময় এই বর্ষপঞ্জিকে বলা হত তারিখ-ই-ইলাহি। বর্ষপঞ্জির তারিখ-ই-ইলাহি ভারশনে, প্রতিটি দিন এবং মাসের আলাদা আলাদা নাম ছিল, আর এখন যে মাসের নামগুলো দেখা যাচ্ছে তারিখ-ই-ইলাহিতে এরকম মাসের নামের বদলে অন্য মাসের নাম ছিল। বাংলাপিডিয়া অনুসারে, আকবরের পৌত্র শাহ জাহান রবিবার দিয়ে শুরু হওয়া সাত দিনের সপ্তাহের প্রচলনের জন্য এই তারিখ-ই-ইলাহি বর্ষপঞ্জির সংস্কার করেন। আর সেই সাথে কোন এক অজানা সময়ে সেই সময় বর্তমান থাকা শকাব্দে (ভারতীয় জাতীয় বর্ষপঞ্জি) থাকা মাসের নামের সাথে মিলিয়ে  তারিখ-ই-ইলাহির মাসের নামকরণ করা হয়। আজ বাংলায় যে বর্ষপঞ্জিটি ব্যবহার করা হয়, সেই বর্ষপঞ্জিটিই তার ভিত্তি স্থাপন করে।[

মুঘল আমলে, ইসলামিক হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাঙ্গালিদের থেকে খাজনা আদায় করা হত। সেই বর্ষপঞ্জিটি ছিল একটি চান্দ্র্য বর্ষপঞ্জি, আর তাই সৌর কৃষিচক্রের সাথে সেই বর্ষপঞ্জিটির কোন সমন্বয় ছিল না কোন কোন উৎস্য অনুযায়ী, খাজনা দানের সময় যে উৎসব এর আয়োজন হত সেই রীতি মুঘল সম্রাট আকবরেরই তৈরি, আর তখন থেকেই বাংলা সালকে বঙ্গাব্দ বলা হত। আকবর তার রাজজোতিষী ফতুল্লাহ শিরাজীকে চান্দ্র্য ইসলামিক বর্ষপঞ্জি এবং সৌর হিন্দু বর্ষপঞ্জিকে সমন্বিত করে একটি বর্ষপঞ্জি তৈরি করতে বলেন। আকবরের দেয়া আজ্ঞা পালন করে ফতুল্লাহ শিরাজী যে বর্ষপঞ্জি তৈরি করে দেন তা ফসলি সন (কৃষি বর্ষপঞ্জি) নামে পরিচিত ছিল। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে, এখান থেকেই বাংলা বর্ষপঞ্জির সূচনা হয়। শামসুজ্জামান খানের মতে, সম্ভবত মুঘল গভর্নর নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ সর্বপ্রথম পুণ্যাহ এর রীতি (খাজনা আদায় করার জন্য একটি উৎসবের দিন) চালু করেন। আর এটা করার সময়ই তিনি আকবরের বার্ষিক খাজনা আদায়ের নীতি গ্রহণ করেন।

আবার এটাও অস্পষ্ট যে বাংলা বর্ষপঞ্জি হুসেন শাহ না আকবর কর্তৃক গৃহীত হয়। বাংলা বর্ষপঞ্জির রীতি আকবরের পূর্বে হুসেন শাহ চালু করে থাকতে পারেন। নিতীশ সেনগুপ্ত বলেন, বাংলা বর্ষপঞ্জি হুসেন শাহই শুরু করুন আর আকবরই, এটা বাংলার ঐতিহ্যগত বর্ষপঞ্জির ভিত্তিতে বসন্তের ফসল সংগ্রহের পর খাজনা আদায় করার কাজ সহজ করে দিয়েছিল। কারণ ইসলামী হিজরি বর্ষপঞ্জি খাজনা আদায়ের দিন ধার্য করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি করে।


হিন্দু বা বৌদ্ধ প্রভাব সম্পাদনা:
------------------------
কোন কোন ঐতিহাসিক বলেন বাংলা বর্ষপঞ্জি এসেছে ৭ম শতকের হিন্দু রাজা শশাঙ্কের কাছ থেকে। আকবরের সময়ের অনেক শতক আগে নির্মিত দুটি শিব মন্দিরে বঙ্গাব্দ শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়। আর এটাই নির্দেশ করে, আকবরের সময়ের আরও অনেক আগেও বাংলা বর্ষপঞ্জির অস্তিত্ব ছিল।

বৈদিক আচার অনুষ্ঠানের জন্য কোন সময়ে কি কাজ হবে এধরণের ধারণা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বৈদিক যুগের জ্যোতিঃশাস্ত্রে পারদর্শীগণ তখন মহাকাশের বিভিন্ন জ্যোতিষ্কের চলাফেরা দেখে সময় সম্পর্কিত হিসাব নিকাশ ও এই সব আচার অনুষ্ঠানের দিন নির্ধারণ করার কাজ করতেন। জ্যোতিঃশাস্ত্র বিষয়ক পাঠ ছিল ছয়টি প্রাচীন বেদাঙ্গ বা বেদ সংক্রান্ত ছয়টি প্রাচীন বিজ্ঞানের একটি- যেগুলো হিন্দুধর্মগ্রন্থের অংশ। বৈদিক আচার অনুষ্ঠানের জন্য প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি একটি উন্নত ও পরিশীলিত সময় নির্ণয় কৌশল এবং বর্ষপঞ্জি প্রস্তুত করে।

হিন্দু বিক্রমী বর্ষপঞ্জির নামকরণ করা হয় বিক্রমাদিত্যের নাম অনুসারে, এটা শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৫৭ অব্দ থেকে। ভারত ও নেপালের অনেক স্থানের মত গ্রামীণ বাঙ্গালী সম্প্রদায়ে বাংলা বর্ষপঞ্জির কৃতজ্ঞতা বিক্রমাদিত্যকে দেয়া হয়। কিন্তু অন্যান্য অঞ্চলে খ্রিষ্টপূর্ব ৫৭ অব্দে সেই বর্ষপঞ্জির সূচনা হলেও বাংলা বর্ষপঞ্জি শুরু হয়েছিল ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দে যা নির্দেশ করে কোন একটা সময়ে বঙ্গাব্দের আদর্শ বিন্দু বা রেফারেন্স পয়েন্টকে পরিবর্তিত করা হয়েছিল।

হিন্দু পণ্ডিতগণ সূর্য, চন্দ্র এবং অন্যান্য গ্রহসমূহের ক্রমাবর্তনকে পর্যবেক্ষণ এবং হিসাব করে সময়ের হিসাব রাখার চেষ্টা করতেন। সূর্য সম্পর্কিত এই হিসাব নিকাশ সংস্কৃত ভাষার বিভিন্ন জ্যোতিঃশাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থে উঠে এসেছে, যেমন ৫ম শতকে আর্যভট্ট কর্তৃক রচিত আর্যভট্টীয়, ৬ষ্ঠ শতকে লটদেব কর্তৃক রচিত রোমক এবং বরাহমিহির কর্তৃক রচিত পঞ্চসিদ্ধান্তিকা, ৭ম শতকে ব্রহ্মগুপ্ত কর্তৃক রচিত খাণ্ডখাণ্ড্যক ইত্যাদি। এই গ্রন্থগুলোতে সূর্য সহ ও বিভিন্ন গ্রহ সম্পর্কে লেখা হয় এবং এদের স্থানান্তর সম্পর্কিত হিসাব-নিকাশ এবং বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়। অন্যান্য গ্রন্থ যেমন সূর্য সিদ্ধান্ত ৫ম থেকে ১০ শতকে রচিত হয় এবং এর অধ্যায়গুলোতে বিভিন্ন গ্রহ এবং দেব দেবী সংক্রান্ত পুরাণ দেখা যায়।

ভারতীয় রাজ্যগুলো যেমন পশ্চিমবঙ্গ্‌, ত্রিপুরা এবং আসামের বাঙ্গালীদের ব্যবহৃত বাংলা বর্ষপঞ্জি সূর্য সিদ্ধান্ত নামক সংস্কৃত গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে বানানো বলে অনেকে বলে থাকেন। এখানে মাসগুলোর ঐতিহাসিক সংস্কৃত নাম রক্ষা করা হয়, সেই সাথে এর প্রথম মাসের নামও বৈশাখ। এই বর্ষপঞ্জি হিন্দু বর্ষপঞ্জি ব্যবস্থার সাথে শক্তভাবে বন্ধনে আবদ্ধ এবং বিভিন্ন বাঙ্গালী হিন্দু উৎসব এটা দেখে ঠিক করা হয়।


সনাতন বাংলা বর্ষপঞ্জী সম্পাদনা:
---------------------------
৫৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে বরাহমিহির "পঞ্চসিদ্ধান্তিকা" নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। গ্রন্থটি পাঁচটি খণ্ডে সমাপ্ত। এই গ্রন্থটিকে জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের সংক্ষিপ্তসার বলে অভিহিত করা হয়। পঞ্চসিদ্ধান্তিকার পাঁচটি খণ্ডের নাম– এই সিদ্ধান্তগুলো হল– সূর্যসিদ্ধান্ত, বশিষ্ঠসিদ্ধান্ত, পৌলিশ সিদ্ধান্ত, রোমক সিদ্ধান্ত ও ব্রহ্ম সিদ্ধান্ত। প্রাচীন দিন, মাস, বৎসর গণনার ক্ষেত্রে 'সূর্যসিদ্ধান্ত' একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বরাহমিহিরের পরে ব্রহ্মগুপ্ত নামক অপর একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী (জন্ম ৫৯৮) একটি সিদ্ধান্ত রচনা করেছিলেন। এই গ্রন্থটির নাম ব্রহ্মস্ফুট সিদ্ধান্ত।

এই গ্রন্থটি খলিফা আল-মনসুরের আদেশে সিন্দহিন্দ নামে আরবি ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে সৌর-মাস নির্ধারিত হয়, সূর্যের গতিপথের উপর ভিত্তি করে। সূর্যের ভিন্ন অবস্থান নির্ণয় করা হয় আকাশের অন্যান্য নক্ষত্রের বিচারে। প্রাচীন কালের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্যের বার্ষিক অবস্থান অনুসারে আকাশকে ১২টি ভাগে ভাগ করেছিলেন। এর একটি ভাগকে তাঁরা নাম দিয়েছিলেন রাশি। আর ১২টি রাশির সমন্বয়ে যে পূর্ণ আবর্তন চক্র সম্পন্ন হয়, তার নাম দেওয়া হয়েছে রাশিচক্র। এই রাশিগুলোর নাম হল– মেষ রাশি, বৃষ রাশি, মিথুন রাশি, কর্কট রাশি, সিংহ রাশি, কন্যা রাশি, তুলা রাশি, বৃশ্চিক রাশি, ধনু রাশি, মকর রাশি, কুম্ভ রাশি ও মীন রাশি। সূর্যের বার্ষিক অবস্থানের বিচারে, সূর্য কোনো না কোন রাশির ভিতরে অবস্থান করে। এই বিচারে সূর্য পরিক্রমা অনুসারে, সূর্য যখন একটি রাশি থেকে অন্য রাশিতে যায়, তখন তাকে সংক্রান্তি বলা হয়। এই বিচারে এক বছরে ১২টি সংক্রান্তি পাওয়া যায়। একেকটি সংক্রান্তিকে একেকটি মাসের শেষ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।

যেদিন রাত্রি ১২টার মধ্যে সূর্য্য ০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশে প্রবেশ করে তার পরদিনই ১লা বৈশাখ (পহেলা বৈশাখ) হয়। যেদিন রাত্রি ১২টার মধ্যে সংক্রান্তি হয় তার পরদিনই মাসের প্রথম দিন। মূলত একটি সংক্রান্তির পরের দিন থেকে অপর সংক্রান্ত পর্যন্ত সময়কে এক সৌর মাস বলা হয়। লক্ষ্য করা যায় সূর্য পরিক্রমণ অনুসারে সূর্য প্রতিটি রাশি অতিক্রম করতে একই সময় নেয় না। এক্ষেত্রে মাসভেদে সূর্যের একেকটি রাশি অতিক্রম করতে সময় লাগতে পারে, ২৯, ৩০, ৩১ বা ৩২ দিন। সেই কারণে প্রতি বছর বিভিন্ন মাসের দিনসংখ্যা সমান হয় না। এই সনাতন বর্ষপঞ্জী অনুসারে বছর ঋতুভিত্তিক থাকে না। একেকটি মাস ক্রমশঃ মূল ঋতু থেকে পিছিয়ে যেতে থাকে।


সংস্কারকৃত বাংলা বর্ষপঞ্জী সম্পাদনা:
------------------------------

বাংলা একাডেমী কর্তৃক বাংলা সন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ সালে। ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ'র নেতৃত্বে এ কমিটি বিভিন্ন বাংলা মাস ও ঋতুতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সাংস্কৃতিকজীবনে কিছু সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাকে নির্ণয় করে সেগুলো হতে উত্তরণের প্রস্তাবনা প্রদান করেন। বাংলা সনের ব্যাপ্তি গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জীর মতনই ৩৬৫ দিনের। যদিও সেখানে পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণের পরিপূর্ণ সময়কেই যথাযথভাবে নেয়া হয়েছে। এই প্রদক্ষিণের মোট সময় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট এবং ৪৭ সেকেন্ড। এই ব্যবধান ঘোচাতে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জীর প্রতি চার বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। ব্যতিক্রম হচ্ছে সে শতাব্দীতে যে শতাব্দীকে ৪০০ দিয়ে ভাগ করা যায় না বা বিভাজ্য। জ্যোতির্বিজ্ঞান নির্ভর হলেও বাংলা সনে এই অতিরিক্ত দিনকে আত্মীকরণ করা হয়নি। বাংলা মাস অন্যান্য সনের মাসের মতনই বিভিন্ন পরিসরের হয়ে থাকে। এই সমস্যাগুলোকে দূর করার জন্য ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কমিটি বাংলা একাডেমীর কাছে কতকগুলো প্রস্তাব পেশ করে। এগুলো হচ্ছেঃ-

১| বছরের প্রথম পাঁচ মাস অর্থাৎ বৈশাখ হতে ভাদ্র হবে ৩১ দিনের;

২|বাকী মাসগুলো অর্থাৎ আশ্বিন হতে চৈত্র হবে প্রতিটি ৩০ দিনের মাস;

৩|প্রতি চতুর্থ বছরের ফাল্গুন মাসে অতিরিক্ত একটি দিন যোগ করে তা হবে ৩১ দিনের।

* বাংলাদেশে বাংলা একাডেমী সরকারীভাবে এই সংশোধিত বাংলা মাসের হিসাব গ্রহণ করে। যদিও ভারতের পশ্চিম বাংলা, অসম ও ত্রিপুরার বাঙালিরা পুরনো বাংলা সনের ব্যবহার করেন।
at April 06, 2018 No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

Thursday, 5 April 2018

১৪ ই মার্চ বিশ্ব পাই( π ) দিবস। পাই একটি অমূলদ সংখ্যা। পাইয়ের মান হলো 3.14159265358979323846264338327950288419716939937510582097494459230781640628620899862803482534211706798214808651328230664709384460955058223172535940812848111745028410270193852110555964462294895493038196442881097566593344612847564823378678316527120190914564856692346034861045432664...
এটি একটি অসীম সংখ্যা।
আমরা সারাজীবন ধরে যদি পাইয়ের মান বলতে থাকি তারপরেও এটি বলে শেষ করা যাবেনা। এটি বলার জন্য নির্দিষ্ট কোন প্যাটার্নও পাওয়া যাবেনা। যেমন ১ কে ১১ দ্বারা ভাগ করলে ০.০৯০৯০৯০৯০ এরকম কোন প্যাটার্নও পাওয়া যায়না।কারণ এটি একটি অমূলদ সংখ্যা।
.
পাই আবিষ্কারের পর থেকে মানুষের জীবনযাত্রার অনেক উন্নতি হয়েছে। চাকা তৈরী করা সম্ভব হয়েছে। আজ বেশীরভাগ যানবাহনেই চাকা ব্যবহৃত হয়।
.
পাই নিয়ে আজও মানুষ গবেষণা করে। পাই একটি বিস্ময়। যা যুগ যুগ ধরে মানুষকে বিস্মিত করে আসছে।
.
ওহ্ আরেকটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম তা হলো- ১৮৭৯ সালের এইদিনে(১৪ ই মার্চ) আপেক্ষিকতার জনক বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন জন্মগ্রহণ করেন। এবং ২০১৮ সালের এই দিনে বর্তমান যুগের বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মৃত্যুবরণ করেন।
১৪ ই মার্চের সাথে যেমন পাইয়ের সম্পর্ক আছে তেমনি ১৪ ই মার্চের সাথে বিজ্ঞানীদেরও সম্পর্ক রয়েছে।
at April 05, 2018 No comments:
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest
Home
Subscribe to: Posts (Atom)

ভুটান ভ্রমণ

ভুটান  বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ। যাকে ভুস্বর্গ বলা হয়।  বাংলাদেশী নাগরিকের জন্য অন এরাইভাল ভিসা সিস্টেম চালু আছে।   ভুটান ভ্রমণের সবচেয়ে ...

  • কার্বোহাইড্রেট- এর শ্রেণিবিভাগ | মনোস্যাকারাইড
    স্বাদের ওপর ভিত্তি করে কার্বোহাইড্রেট দু’প্রকার, যথা- (১) শ্যুগার: এরা স্বাদে মিষ্টি, দানাদার এব...
  • (no title)
    টেরিডোফাইটা বা ফার্নবর্গীয় উদ্ভিদ | টেরিস এর যৌন জনন  প্রোথ্যালাসে যৌন জনন সম্পন্ন হয়। এর নিম্নতলে খাঁজের কাছাকাছি স্থানে আর্কিগোন...

Search This Blog

Pages

  • Home

About Me

ZARJIS
View my complete profile

Report Abuse

Labels

  • কবিতা (2)
ZARJIS. Awesome Inc. theme. Theme images by molotovcoketail. Powered by Blogger.